Monday, March 29, 2021

ঝিনুক বৃত্তান্ত


সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়েছেন আর ঝিনুকের দেখা পাবেন না এটা কল্পনা করাই দুষ্কর। নীল জলরাশির তীর ঘেঁষে সাদা বালিয়াড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঝিনুক সৈকতের সৌন্দর্য যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিংবা ভুবন ভুলানো হাসিমাখা কোনো চপল বালিকার গলায় শোভা পায় ঝিনুকগুচ্ছ, তার শোভাবর্ধন করে শতগুণ। কিন্তু ঝিনুকের মূল আবেদন এর বুকে লুকিয়ে থাকা মুক্তা। নিজ গুণের বদৌলতে এটি হয়ে উঠেছে সমাজের আভিজাত্য আর প্রাচুর্যের প্রতীক। মুক্তা নিয়ে কম বেশি সবাই নানা কথা শুনেছেন। কেউ কেউ চোখেও দেখেছেন। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন মুক্তা আসলে কি? এটা কি দিয়ে তৈরি? তৈরির প্রক্রিয়াদিই বা কি?

মুক্তা মূলত ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সূক্ষ্ম স্ফটিক। CaCO³ র আকরিক অ্যারগোনাইট আর ক্যালসাইটের সাথে বিশেষ ধরনের কংক্রিওলিন প্রোটিনের মিশ্রণে মলাস্কা পর্বের প্রাণীর নরম কোষকলার (ম্যান্টল) অভ্যন্তরে মুক্তা তৈরি হয়। আদর্শ মুক্তা সবসময়ই মসৃণ আর নিখুঁত গোলাকৃতির হয়। তবে অনিয়ত আকারেরও হয় যা বারক মু্ক্তা নামে পরিচিত।
মুক্তা তিন ধরণের হয়। ন্যাচারাল, কৃত্রিম বা চাষকৃত আর নকল। স্বভাবতই প্রাকৃতিক মুদ্রার কদর বেশি হয়।

এখন, প্রশ্ন হচ্ছে মুক্তা তৈরি হয় কিভাবে??

মুক্তা তৈরি হয় মলাস্কা পর্বের কোনো প্রাণীর শরীরে; ঝিনুক, শামুক...। এদের শরীর দুভাগে বিভক্ত। বাইরের চুনময় শক্ত খোলস (Shell) আর ভিতরের মাংসল নরমাঞ্চল (Mantle)। ঝিনুকের খোলস আবার তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত; Periostracum, Prismatic ও Nacreous। খোলস ভেদ করে Mentle টিস্যুতে যখন কোন বস্তুকণা, খাবারের টুকরা, বালিকণা প্রভৃতি প্রবেশ করে তখন নিজেকে রক্ষার জন্য মলাস্কা খোলসের সবচেয়ে ভেতরের স্তর Nacreous থেকে এক ধরণের পদার্থ ক্ষরণ করতে থাকে যাকে নেকার (Nacre) বলে। নেকার মূলত CaCO³ এবং কংক্রিওলিন প্রোটিনের মিশ্রণ। দীর্ঘসময় ব্যাপী ঐ বস্তুকে ঘিরে নেকার ক্ষরিত হয়ে একটা সময় মুক্তা তৈরি করে। তবে বাহ্যিক কোনো কিছুর প্রতি সাড়া দিয়ে মু্ক্তা তৈরির ঘটনা খুব কমই ঘটে। সাধারণত মলাস্কার শরীরের অভ্যন্তরে কোনো পরজীবীর আক্রমণ বা ম্যান্টলের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলেই বেশি নেকার ক্ষরণের ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক মুক্তা তৈরি হয় এভাবে। শেষে পরিপক্ব মুক্তা কোনো সৌভাগ্যবান মুক্তাশিকারীর হাতে পড়ে তার ভাগ্য প্রসন্ন করে দেয়..হাহা।

কৃত্রিম মুক্তা তৈরি হয় কোনো মুক্তাখামারে। ঝিনুকের ম্যান্টল টিস্যু কেটে কোনো উত্তেজক পদার্থ বসিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত উত্তেজক পদার্থটি হয় এক টুকরো মুক্তাচূর্ণ যাকে Mother of Pearls বলে। যার দরুন ঝিনুকটি নেকার ক্ষরণ করে এবং একসময় মুক্তায় পরিণত হয়। আর নকল মু্ক্তা তৈরি হয় কাঁচ দিয়ে।▪◾

_______
[সমুদ্র, ঝিনুক আর মুক্তার কথা একসাথে আসলেই তিন গোয়েন্দার 'অথৈ সাগর' গল্পের কথা মনে পড়ে।😀]

-অনিক আব্দুল্লাহ।

No comments:

মানব শরীর তত্ব

Article:2 ভ্যাসেকটমি কী?ভ্যাসেকটমির পর কী হবে? এটা জানতে হলে প্রথমে একটু বেসিকটা জানতে হবে।কী বেসিক? দেখো নামটি হচ্ছে ভ্যাসেকটম...